POST 18


 আমাদের এই ঘোরাটা ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে হয়েছিলো। করোনাকালে কোথাও ঘুরতে যেতে না পারার জন্য আমরা সব বন্ধুরা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম । আবার অনেকদিন পর বেড়িয়ে পড়েছিলাম পাহাড়ের উদ্দেশ্যে । আমাদের কোনো প্রোগ্রাম আগে থেকে ঠিক করা ছিলো না । কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । নিউজলপাইগুড়ি থেকে সোজা গাড়ি ঠিক করে নিয়ে চলে আসলাম দার্জিলিং জেলার ছোটো একটি গ্রাম টংলুতে, একদিন এখানে কাটিয়ে আমরা কমলালেবুর বাগানে ভরা সিটং -এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম । সকাল এগারোটার সময় টুংলু থেকে রওনা দিয়ে চিত্রে ও মানেভঞ্জে হয়ে অনেকটা পথ অতিক্রম করে বেলা আড়াইটার সময় আমরা সিটিং এসে হাজির হলাম । গাড়ির ড্রাইভারের সহযোগিতা না থাকলে আমরা হয়তো সিটিং এসে কোনো থাকার ব্যবস্থা করতে পারতাম না । তার সহোযোগিতায় আমাদের সিটিং জায়গাতে থাকার একটা ভালো ব্যবস্থাই হয়েছিলো । আগে বলে রাখা ভালো যে সিটং – ১, সিটং – ২ ও সিটং – ৩ আছে । আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিলো সিটিং – ২ । হোমস্টের নাম হলো অনুগড় ( Anugarh ) এবং মালকিনের নাম হলো প্রিমিলা মুখিয়া । অতবেলাতে হোমস্টে উপস্থিত হয়েও আমরা গরম গরম ভাতের সাথে ডাল , আলুর চোখা ও ডিমের অমলেট দিয়ে সেদিনের মতো মধ্যাহ্ন ভোজন করেছিলাম। সেদিন বিকেলবেলা পায়ে হাঁটা পথে আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা নেমে এলো । রাত্রে আহারাদি করে আমরা সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম । কারন আমাদের অনেকটা পথ গাড়িতে আসার জন্য সবার শরীর খুবই ক্লান্ত ছিলো।


পরের দিন সকালবেলা জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম সিটিং যার জন্য বিখ্যাত সেই কমলালেবুর বাগানের উদ্দেশ্যে । আমার বন্ধুরা সব ঠিক করেছিলাম পায়ে হেঁটে কমলালেবুর বাগানের অভিমুখে যাবো যা কথা তাই আমরা সকলে মিলে করলাম । চল্লিশ মিনিটের মতো পায়ে হাঁটা পথে আমরা এগিয়ে চললাম অরেঞ্জ ভিলার দিকে । যেতে পথে সবুজ বণানী দেখতে দেখতে পথ চলাটা কোনো রকম অসুবিধাই হয়নি । অরেঞ্জ ভিলা ছাড়াও এখানে আরো কয়েকটি কমলালেবুর সুন্দর বাগান আছে ।  অরেঞ্জ ভিলার কমলালেবুর বাগানে প্রবেশ করার পর দারুন একটা সুন্দর অনুভূতি আমাদের সকলের মধ্যে হয়েছিলো । এখানে প্রবেশ করার জন্য মাথা পিছু পঞ্চাশ টাকা হলো প্রবেশ মূল্য । তবে আমাদের এই প্রবেশ মূল্য দিতে হয়নি কারন আমাদের হোমস্টের মালকিনের কোনো আত্মীয়ের এই বাগান ছিলো বলে । অনেকটা সময় এই লেবু বাগানে কাটিয়ে ছিলাম । কিছুতেই এখান থেকে যেতে মন চাইছিলোনা । তারপর লেবু বাগানে প্রবেশ করে গাছের তলা থেকে লেবু কুড়ানোর আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায়না । তবে আমাদের লেবু বাগানে নিষেধ ছিলো গাছ থেকে কোনো লেবু পাড়া যাবেনা । কেউ যদি গাছ থেকে লেবু পারে তবে এখানে তাকে পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয় । এখানে এসে পরিচয় হলো তন্ময় দামের সাথে যিনি এই অরেঞ্জ ভিলাটা নিজের হাথে পরিচালনা করেন । এখানে থাকারও ব্যবস্থা আছে, কমলালেবুর বাগানে থাকার একটা আলাদা মজাও আছে । এখান থেকে বনের পথে ট্রেক করারও ব্যবস্থাও আছে । এখানে অনকটা সময় কাটানোর পর আবার আমরা রওনা দিলাম আমাদের থাকার হোমস্টের দিকে । হাঁটা পথে সবুজ গাছপালা ও চড়াই উৎরাই পথে বেশ ভালো লাগছিলো । এই রকম একটা সবুজ গ্রামকে দেখলে সবারই ভালো লাগে । পথ চলতে চলতে শোনা যাবে অনেক রকম পাখির কলতান।